সুদীপ নাথ আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছে

এই ব্লগে আপনাকে স্বাগত ...... আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য এই ব্লগকে আরও সমৃদ্ধ করবে ...... তার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরুধ রইল

Tuesday, 30 June 2015

যান দুর্ঘটনা এড়ানোর পদ্ধতি -- পর্ব-৬



সতর্কতার আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি ?

মনে রাখবেন অপ্রত্যাশিত কারণে খুব কম সংখ্যক দুর্ঘটনাই ঘটে। প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই ঘটে কতগুলি সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। এই সমস্ত দুর্ঘটনা গুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনা গুলো এড়ানো যেতো। আর তার থেকেই আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই এড়ানো যায়।

অনেকে মনে করেন যে, ট্র্যাফিক রুল মেনে চললেই সব সময় বিপদমুক্ত থাকা যায়। এটা সঠিক নয় এই কারণে যে, এটা আশা করা উচিত নয় যে, গাড়ি চালকেরা ট্র্যাফিক রুল ভাঙ্গবে না। আপনার সতর্কতা, আপনারই জীবন বাঁচানোর স্বার্থে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ট্র্যাফিক পয়েন্টে দুর্ঘটনা হয়না বললেই চলে।

রাস্তার অন্য একটি বিশেষ বিপদজনক পরিস্থিতি হচ্ছে নির্জন রাস্তা। এখানে একটি বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক কারণ কার্যকরী থাকে। এখানে মন থেকে সতর্কতা মুছে গিয়ে, কল্পিত নিরাপদ অনুভুতির সৃষ্টি হয়। নির্জন রাস্তা লোকে পার হয় কোণাকুণি ভাবে এবং কোন দিকে না তাকিয়ে। অনেক সময় দুজনে কথা বলতে বলতে হাঁটে রাস্তার মাঝ বরাবর। আর বাচ্চারা খেলতে খেলতে রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। আর গাড়িগুলো কত গতিতে চলে আর কিসব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটায় তা সবারই জানা।

এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হয় যে, রাস্তায় সম্ভাব্য বিপদের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সমস্ত বিপদ, দেখা দিচ্ছে প্রকৃতি থেকে নয়, আমাদের নিজেদের ক্রিয়াকলাপ থেকেইএই সব বিপদ বহুবিচিত্র ও খুবই দ্রুত পরিবর্তনশীল। পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে, সময়ে সময়ে কিছু কিছু বিপদের কারণ অবলুপ্ত হয়ে যায়,  আর নতুন ধরণের বিপদের আবির্ভাব ঘটে। কতগুলি সমস্যার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। বিপদের কারণ পরিবর্তিত হয়, যানবাহনের যান্ত্রিক ও আকার-আকৃতিগত বিকাশ তথা পরিবর্তনের সঙ্গে, রাস্তাঘাটের উন্নতি বা অবনতির সঙ্গে।

বৈজ্ঞানিক তথা প্রযুক্তিগত বিপ্লবের যুগে, আমাদের মত আধুনিক মানুষের অর্জন করতে হবে, পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে গতিক বুঝে চলার দক্ষতা, প্রতিক্রিয়ার দ্রুততা (to promptly react) এবং পরিস্থিতির সঙ্গে  নিজেকে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা।

একটা কথা যতই অদ্ভুত শোনাক না কেন, আপনি যখন পথচারী, তখন কোন চালকের শুভবুদ্ধি বা আগত যানবাহনের ত্রুটিহীনতার উপর বিশ্বাস আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেই ভাবেই আপনার মন তৈরি রাখুন। রাস্তার মুহুরমুহু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলতে হলে, পূর্বানুমানের কৌশলটি আয়ত্ব করা ছাড়া বিকল্প কোন কিছুই নেইতা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
  
তাছাড়া শতসহস্র তথ্য আর অসংখ্য অতি সুক্ষ সব বিষয়বস্তুর সমন্বয়ে একজনের মানসিকতা গড়ে উঠলেও, তা যেকন সময় পরিবর্তিত হতে পারে। নূতন নূতন উদ্দীপনা বা সঙ্কেত বা ভাষার মাধ্যমে, নূতন তথ্যের আগমনে, মানসিকতা ধীরলয়ে বা দ্রুতলয়ে পরিবর্তিত হতে পারেএককথায় মানসিকতা পরিবর্তনশীল। সমগ্র মানবজাতির অর্জিত জ্ঞানের পরিমাণ প্রতি দশ বছরে দ্বিগুণ হয়। তাই এই দ্রুতলয়ে তথ্যের বৃদ্ধি, আমাদের মানসিকতাকে দ্রুত পরিবর্তিত করে চলেছে, তা সহজেই অনুমেয়। তবে এটাও ঠিক যে, একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট মানসিকতা অনুমান করা যায়, একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে একজন একটা নির্দিষ্ট আচরণ প্রদর্শন করে। অর্থাৎ মানসিকতা স্থায়ী কোন বিষয় নয়। আর অতি চঞ্চল বা  CHOLERIC TYPE মেজাজের কেউ উপযুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন রকমের উগ্র আচরণ করেএরা সবসময় মাত্রাতিরিক্ত সাহসীএরা এক কথায়, প্রায়শই দুঃসাহসী কাজকর্মে জড়িয়ে পরে এই ধরণের লোকেরা চালকের আসনে বসলে কি হয়, আর কি হচ্ছ, সহজেই তা অনুমেয়
 
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, এই অতি সাধারণ সত্যটি একটা বালকও বোঝে হ্যা, এটা যদি মেনে নিতেই হয়, তাহলে, পাল্টা একটা প্রশ্নও উঠে আসে যে, বাচ্চারা যেটা বোঝে, সেটা পরিবহণ দপ্তরের নীতি নির্ধারকেরা বোঝেন কিনা উত্তর অবশ্যই আসবে যে তারা এসব কিছুই বোঝেন না বা তাদের অন্য কোন গোপন উদ্দেশ্য আছে তার প্রমাণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, তাহলে তো, ড্রাইভিং লাইসেনস ইস্যু করার আগে, সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রার্থির সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা করা হত  কিন্তু কোনও ধরণের মানসিক রোগ নিয়ে কোন আবেদনকারী হাজির হয় কিনা এবং তা যাচাই করা হয় কিনা, তার জবাব কিন্তু, অতীত কাল থেকে হাল আমল পর্যন্ত সব সময়েই নেতি বাচক 
   
তদুপরি, কুসংস্কার বসে, দুর্ঘটনার ফাঁড়া কাটাতে মাদুলি নিয়ে, আর জ্যোতিষের কাছে গিয়ে আগাম রত্ন ধারণ করে, আর তথাকথিত ইশ্বরের কাছে মানত তথা মানসী করে, নিশ্চিন্তে এক্সেলেটার চাপতে দুঃসাহসী হয়ে পড়ে অনেক চালক। উল্লেখিত অতি চঞ্চল বা CHOLERIC TYPE মেজাজের উচ্চ পর্যায়ে থাকা কেউ যদি, মানসিক দিক দিয়ে এইসব কুসংস্কারের দিকে ঝুকে পড়ে, তবে তো আর কথাই নেই।

2 comments :