আমরা যখন যানবাহনে চড়ি
মূল কথা= মাথা বাঁচাতে পারলে প্রায় সব মৃত্যুই ঠেকানো যায়
আমাদের শিশুর জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে, নিজেদের বা সঙ্গী-সাথীদের,
স্বার্থে আমরা দুচাকা, তিনচাকা, চার চাকা, যে যানবাহনেরই আরোহী হই না কেন, আমাদের করনীয় অনেক কিছুই থাকে। কারণ, ২০০৫ সালে ভারতে, এক লক্ষ দশ হাজার মানুষের মৃত্যু
হয়েছে, পঁচিশ লক্ষ মানুষ হাসপাতালে গেছে এবং বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০১৫ সালে দুই লক্ষ মানুষের
মৃত্যু হবে ও পঁয়ত্রিশ লক্ষ মানুষ হাসপাতালে যাবে।
একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, প্রায় সব
যাত্রীকেই চলমান যানবাহনে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকতেই দেখা যায়। অনেকেই চলন্ত গাড়িতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সময় কাটান। আর চালকের
অসভ্যতা, যেমন রেষারেষি, মোবাইলে কথা বলা এসব দেখলে দুয়েকজন
সাহসী যাত্রী হয়ত
প্রতিবাদ করেন সময়ে সময়ে, কিন্তু সহযাত্রীদের সহায়তা তেমন একটা পান না বললেই চলে। যাইহোক, চলুন এই
উদাসীনতা কিভাবে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, মানে বিপদের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা
খতিয়ে দেখা যাক।
দুর্ঘটনায়, যাত্রীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ কিন্তু মাথায় আঘাত
লাগা। মাথা ছাড়া শরীরের অন্য কোন অঙ্গে আঘাত লাগলে মৃত্যু হয়না, যদিও অল্প সংখ্যক মারাত্মক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বেশি
রক্তপাত বা দেরিতে চিকিৎসার কারণেই মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
তাছাড়া, মাথায় আঘাত থেকে বহুবিচিত্র স্থায়ী অস্থায়ী গুরুতর
মানসিক ও
স্নায়বিক রোগ দেখা
দেয়। এই ধরণের
কত রোগী যে, পরিবার সহ পথে বসে যায়, কে তার খোঁজ রাখে। এসবের আমরা খোঁজ পাইনা কারণ, তারা জীবন্মৃত হয়েই থাকে, থাকে সাধারণের দৃষ্টির বাইরে। মিডিয়া দুর্ঘটনার খবর ছেপে দিয়ে, সরকারকে দোষারোপ করেই, বিষয়টা থেকে দূরে চলে যায়। আমরা
কেউ পেছনের দিকে তাকাই না।
অথচ আমরা একটু সতর্ক
হলে, সব না হলেও, প্রায় সব ক্ষেত্রেই অন্তত মাথাটা বাঁচাতে পারি। চলন্ত
গাড়িতে, উদাসীন না থেকে, যে গাড়িতে আছি ও যেসব গাড়ি এগিয়ে আসছে, সেগুলোর গতি-প্রকৃতির
উপর অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে পারি, যেন অন্তত মাথাটা বাঁচানোর চেষ্টা
করতে কয়েক সেকেন্ড সময় পাই। মনে রাখতে হবে, মাথায়
অল্প-স্বল্প আঘাতেও ভিতরে রক্ত ক্ষরণ হয়ে মৃত্যু
হতে পারে, যাকে ইংরাজিতে বলে
ইনটারনেল হেমারেজ হয়ে মৃত্যু।
চলন্ত গাড়িতে সবসময়
সীট বেল্ট বাধতে হয়। মোটর সাইকেলে শুধু চালকই নয়, সবাইকেই হেলমেট পরতে হবে।
যারা লজ্জায় এসব মানবেনা, তাদের মনকে তৈরি
রাখতে হবে, দুঃখ জয় করে রাখতে
হবে। তাহলে, নিজের শিশুকে
হা্রালেও কোন অসুবিধা হবেনা। আর যারা লজ্জাকে জয় করতে পারবেন, তারা গাড়িতেও হেলমেট পরবেন। এটা
মোটেই হাসি ঠাট্টার কথা নয়, এটা
আমাদের মত লক্ষ লক্ষ মানুষ ও শিশুর জীবন মরণের প্রশ্ন। আমরা না হয় মরতে রাজি, কিন্তু শিশুরা কী দোষ করেছে? ওরা কেন বড়দের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পুতুল হয়ে
থাকবে। আমাদের কোন অধিকার নেই তাদেরকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেবার। ছোট বেলায়, যাদবপুরে রাস্তায় একটা
ছবি সহ কার্টুন দেখেছিলাম, যাতে বাবার পেছনে বসা হেলমেট ছাড়া বাচ্চাটা বলছেঃ-
“বাবার মাথার দাম আছে, আমার মাথার নেই”।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য
যে, ৭/৮ বছর
আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারত সরকারকে গাড়িতে হেলমেট পরার জন্য সাহায্যের হাত
বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তা কতদূর এগিয়েছে জানা যায়নি। এদিকে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর নেতাবাবুরা, আমলারা যার যার ঘর গোছানোর ব্যস্ততায়, নামকে ওয়াস্তে
দায়সারা দুঃখ প্রকাশ, প্রতীকী সভা করে, উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে দিব্যি পার
পেয়ে যাচ্ছেন।
No comments :
Post a Comment