সুদীপ নাথ আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছে

এই ব্লগে আপনাকে স্বাগত ...... আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য এই ব্লগকে আরও সমৃদ্ধ করবে ...... তার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরুধ রইল

Sunday, 31 May 2015

নিকোটিন ত্যাগ করার ও করানোর কৌশল



এই নিবন্ধটির অবতারণা তাদেরই জন্যে যাদের ইচ্ছে হয় ধূমপান ছেড়ে দেয়ার, অথচ ছাড়তে পারছেন না এবং তাদেরও জন্যে যারা আত্মীয়পরিজনকে ধূমপান থেকে বিরত করতে চান। মনে রাখতে হবে খৈনী, জর্দা, নস্যি, দোক্তা ইত্যাদির নেশাও নিকোটিনের জন্যেই হয়। ফর্মুলা একই। তাই আলাদা করে নাম উল্লেখ করছি না।

যারা নিজে ধূমপান করেন না, তাদের সবারই সেই একই কথা – “ধূমপান মারাত্মক ক্ষতিকর, এটা ছেড়ে দিলেই তো সব সমস্যা মিটে যায়কথাটা বলা খুবই সহজ। কিন্তু যারা ধূমপানে আসক্ত, যারা ইচ্ছে থাকলেও তা ছাড়তে পারছেন না, তারাই জানেন এই ছেড়ে দেয়াটা কতটুকু কঠিন। শুধু তাই নয়, তারা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করেন, এই জীবনে তাদের ধূমপান ত্যাগ করা হয়ত সম্ভব নয়। নতুবা এক কথায় সবাই ধূমপান ছেড়ে দিত।


ধূমপায়ী আর অধূমপায়ীদের এই পরস্পর বিরোধী ধারণা বা দ্বন্দ্বের সমাধান সুত্রের মধ্যেই নিহিত আছে, ধূমপান ত্যাগ করার কৌশল আয়ত্ব করার সমাধান সূত্র। বাইরে থেকে যতই সহজ মনে হোক না কেন, বিষয়টি যথেষ্ঠ মনোযোগের দাবি রাখে, কিন্তু পদ্ধতিগত দিক থেকে তা অতি সরলীকৃত করা যায়।

ধূমপান ত্যাগ করার বিষয়টি সাইকো-সোসিও-বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্টর দ্বারা পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত ও নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে যিনি নিজে ধূমপান ত্যাগ করতে চান, এবং যিনি অন্যকে ধূমপান থেকে বিরত করতে চান, উভয়েই কিছু কিছু বিষয়ে একমত পোষণ করলেও, কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে, পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে উঠেনা। অমতের বিষয়গুলি নিয়ে, দুতরফই এমন জটিলতা সৃষ্টি করেন যে, এই বিবাদ নিয়েই সময় অতিবাহিত হতে থাকে এবং ধূমপান ত্যাগের প্রসঙ্গটি গৌণ হয়ে যায়। তর্ক থেকে তর্ক বাড়ে, ধূমপানও বেড়েই চলে। কারণ ধূমপানও একটা প্রোগ্রেসিভ রোগ (progressive disease )

ধূমপান ছেড়ে দেবার দুই রকম পদ্ধতি আছে। একটি হচ্ছে, ধূমপায়ী নিজে উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, ধূমপানের নেশা থেকে মুক্ত হওয়া। আরেকটি হচ্ছে, চিকিৎসকের পরামর্শে, ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এই নেশা থেকে মুক্ত হওয়া।

ধূমপায়ী মাত্রই জানেন, কখনও কখনও তাদের ধূমপান ত্যাগের বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, আবার কখনও কখনও এই প্রসঙ্গটি একেবারেই ভুলে যান। এইভাবে ধূমপায়ীরা দীর্ঘসূত্রি হয়ে পড়েন। এই অবস্থাকে একটা মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাকটর দিয়ে সূত্রায়িত করা যেতে পারে। এই সমস্যায় যা করতে হবে, তা হচ্ছে, ধূমপান ছেড়ে দেবার বাসনাকে বারনিং ডিজায়ার(burning desire)-এ নিয়ে যেতে হবে। ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করে নিতে হবে। আকাঙ্ক্ষাকে তীব্রতম করে তুলতে হবে। এই সুতীব্র বাসনাকে তুঙ্গী অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। তারজন্যে ধূমপানের নেশা সম্পর্কেও মোটামুটি জানতে হবে।
প্রথমেই আর্থিক দিকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক। একজন ধূমপায়ী, তা সিগারেটই হোক বা বিড়িই হোক, তার জন্যে, দিনে দশ টাকা থেকে দেড়-দুশো টাকা খরচ করেন। যারা দৈনিক এক প্যাকেট সিগারেট খান, তাদের খরচ ধরে নিচ্ছি প্রতি মাসে, প্রায় এক হাজার টাকা। বছরে বারো হাজার টাকা। একজন ২৫ বছর বয়েসে এই খরচ শুরু করলে, যেহেতু এই নেশা প্রগ্রেসিভ, তাই পঞ্চাশ বছর বয়েসে তার কমবেশি ২ প্যাকেট লাগবে। আর সিগারেটের দামও বাড়বে বই কমবে না। তাহলে ধরে নিচ্ছি, তখন দুই প্যাকেটের দাম দাঁড়াবে মাসে ৩ হাজার টাকা। বছরে ৩৬ হাজার টাকা। এবার গড় করলে দাড়াচ্ছে বছরে ২৪ হাজার টাকা। এখন ২৫ বছর X ২৪ হাজার = ৬ লক্ষ টাকা। সেই টাকা রেকারিং ডিপোজিট করলে আসবে আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি। এ তো বললাম কম রোজগারি ধূমপায়ীর কথা। বড়লোকের জমতে পারে তার তিন গুণ অর্থাৎ ৩০ লক্ষ টাকা। এই টাকা  দিয়ে কি একটা বাড়ি করা যায় না ? হয়ত না । কিন্তু একটা জমি তো কেনা যায়। এবার আসুন বাড়ি কিভাবে হতে পারে তা দেখে নিই। আমি মাত্র ২৫ বছরের হিসেব দিয়েছি কিন্তু। এটাকে ২০ বছর বয়েস থেকে ৭০ বছরে নিয়ে যান। দেখবেন তিনি একটা বাড়ির টাকা ধোঁয়ায় মিশিয়ে দিয়েছেন। এই ধরণের অনেক কন্যা দায়গ্রস্ত পিতাকে মাথা ঠুকতে দেখা যায় বা ছেলেমেয়ের উচ্চ শিক্ষায় টাকার অভাবে পড়াশুনা তাদের হয়ে উঠে না।

মনস্তাত্ত্বিক দিকটির মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে ভাগ্য নির্ভরতার বিষয়টি। প্রচার ব্যবস্থার অগ্রগতির কারণে প্রায় সকলেই জানেন যে, ধূমপান ক্যানসার সৃষ্টি করার একটি শক্তিশালী ফ্যাকটর। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ধূমপানে ক্যানসার হবেই হবে। তাই অনেকে যারা ভাগ্যের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে রাখেন, তারা ভাবেন যে, তাদের ভাগ্য খারাপ হলেই ক্যানসার হবে। অনেক সময় কোন জ্যোতিষী কাউকে বলে দেন তিনি দীর্ঘজিবী। আর সেই আজগুবি কুসংস্কারাছন্ন ধারণার শিকার হয়ে দিব্যি সিগারেট ফুঁকে যান। কিন্তু ক্যানসার হলে, তখন সেই কুসংস্কার ঝেড়ে মুছে বিজ্ঞানেই নির্ভর করতে চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ক্যান্সার ছাড়া ধূমপানের অন্যসব মারাত্মক ক্ষতিগুলো প্রচারে নেই বললেই চলে। তাই এই অবস্থা। এখন দেখা যাক, অন্যান্য মারাত্মক বিষয়গুলো কী কী ।

যারা দীর্ঘ দিন ধূমপানে আসক্ত, তাদের যেকোন চিকিৎসায় অষুধের পরিমাণ অনেক বেশি লাগে। তাছাড়া, সিগারেট সহ যেকোন তামাকজাত দ্রব্যই নিকোটিন সমৃদ্ধ। নিকোটিন আমরা যেভাবেই গ্রহণ করি না কেন, তা রক্তে গিয়ে পৌছায়। রক্তের হিমোগ্লোবিন তৎক্ষণাৎ অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে, নিকোটিন পরিবহনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। দীর্ঘ দিনে তা মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে।

অক্সিজেন এমনিতেই হৃদপিণ্ডের দূরবর্তি অঞ্চলে, যেমন হাত পায়ে, কম পৌঁছয়। নিকোটিনের প্রভাবে তা আরো খারাপ আকার ধারণ করে। ফলে, পরিমাণ বিশেষে এথেরোস্ক্লেরোসিস  ( atherosclerosis) নামে একটা ভীষন কঠিন রোগের জন্ম দিতে পারে। এই রোগ হলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। একবার যৌন ক্ষমতা কমে গেলে, তা নিরাময় না হবার সম্ভাবনাই বেশি। নিরাময় হলেও পনের থেকে কুড়ি বছর লেগে যায়। তখন যৌবনও ফুরিয়ে যায়। এই কারণে যে কত সংসার ভেঙ্গে যায়, কে তার খোঁজ রাখে। তাছাড়া গ্যাংগ্রীন হলে তো মৃত্যু অনিবার্য। অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতির জন্যে হতে পারে সেরিব্রাল হ্যামারেজ বা থ্রম্বোসিস। আর হতে পারে বেশি বয়েসের ডায়াবেটিস। অনিদ্রা বা ঘুম কমে যাওয়া এদের চিরসঙ্গী। সব মিলিয়ে নিকোটিন একজনকে তিলে তিলে শেষ করে ছাড়ে। নিকোটিনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার পাওয়া সাধারণত নির্ভর করে বয়েসের উপর। কত বেশিদিন নিকোটিন শরীরে যাচ্ছে তার উপর।

এবার আমাদের জানতে হবে আসল কথাটা, মানে নিকোটিনের নেশায় কীভাবে আমরা আটকে পড়ি, অর্থাৎ গলায় বঁড়শির কাঁটা হয়ে তা কিভাবে আটকায়। একটানা প্রায় দেড় মাস যদি কেউ প্রতিদিন একটা করে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সিগারেট খান, তাহলে তিনি নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়বেন। তাহলে প্রতিদিন তাকে সেই ব্র্যান্ডের সিগারেটের সম পরিমাণ নিকোটিন নিতেই হবে। অন্যথায় তার কতগুলি শারীরিক মানসিক উপসর্গ দেখা দেবে। এই অবস্থাকে বলে বিরতি লক্ষ্মণ তথা উইথড্রয়াল সিনড্রোম।

কিন্তু এই আসক্তিটা আসে কোত্থেকে সেটাই মূল প্রশ্ন। এই প্রশ্ন প্রায় সকলের মনেই উদয় হওয়া স্বাভাবিক। আসলে এর পেছনে দায়ী থাকে কিছু ভ্রান্ত ধারণা। ভ্রম বশত প্রথম দিকে, বন্ধুদের প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়েই হোক, উৎসাহের কারণেই হোক বা উঠতি বয়েসে বড়দের সমপর্যায়ভুক্ত হবার বাসনায়ই হোক, সবাই ভাবে তারা কোনদিনও আসক্ত হবে না। এই পর্যায়ে মনে করে আসক্তি আসার আগেই, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নেবে। অথচ নিকোটিন একটা উত্তেজক মাদক, ফলে শরীর-মনে, ভাল লাগার অনুভুতি আস্বাদন হয়। দারুণ একটা মানসিক শক্তিও পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই তা হারিয়ে যায়। আর অক্সিজেনের অভাবে শুরু হয় দুর্বলতা, সঙ্গে অবসাদ। এই অবসাদ ও দুর্বলতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ আবার নিকোটিন গ্রহন করা। এইভাবেই ক্রমবর্ধমান হারে চলতে থাকে এই আবর্তন প্রক্রিয়াটি।

তাছাড়া, বিরতি লক্ষ্মণ তথা উইথড্রয়াল সিনড্রোমগুলোর জন্যেও নিকোটিন ত্যাগ করা অসহনীয় হয়ে উঠে। সঙ্গে থাকে সাইকোসোমাটিক সমস্যা। যেমন, সিগারেট না খেলে মলত্যাগে অসুবিধা। এটা সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার। উইথড্রয়াল সিনড্রোমগুলো ব্যাক্তি বিশেষে বিভিন্ন রকমের হয়। কারও ঘুম বেড়ে যায়, কারও ঘুম কমে যায়। কারও ক্ষিদে বাড়ে কারও বা কমে যায়দেখা দিতে পারে চঞ্চলতা, কাজে অনীহা, প্রচন্ড তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা রাগ, মনঃসংযোগের অভাব, মাথা ব্যাথা, অবসন্নতা, কুষ্ঠ কাঠিন্য, দাস্ত, ঘুমভাব, অসহিষ্ণুতা, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, খাবারের পরিমাণে বৃদ্ধি (caloric intake) , মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা বৃদ্ধি ইত্যাদি। আর সর্বোপরি টোব্যাকো ক্র্যাভিং (TOBACO CRAVING ), মানে নিকোটিনের উদগ্র আকাঙ্খা।

যারা দীর্ঘ দিনের আসক্ত, তাদের তাদের গলা খুসখুস করে। দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো ব্যহত হয়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এটা নাকি নেশা শুরুর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়া মানে ফ্ল্যাশ ব্যাক অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের প্রত্যাবর্তন। এই বিরতি লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহ বা একটু বেশি দিন স্থায়ী হয়। আর আগে যদি কেউ নেশা কোনদিন ত্যাগ করে থাকেন, বা কম বয়েসে তা এক সপ্তাহ স্থায়ি হয়।

নিকোটিনের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে অনেকেই চেষ্টা করেন নেশা থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু এতে কাজ হয় না। যদি কারো নেশা ছাড়ার ইচ্ছে থাকে, তবে সেই ইচ্ছাকে বার্নিং ডিজায়ার তথা সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায় নিয়ে যেতে হবেযেহেতু বিরতি লক্ষনই আপনার পথের বাধা, তাই আপনার পরিবার পরিজনকে, আপনার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিন। তাদের কাছে কিছু দিনের জন্যে সহায়তা চান। কারণ নিকোটিন বন্ধ করলে, কোন ঘটনায় প্রচন্ড তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা রাগ হলে, আপনি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে ফেলতে পারেন। যা জীবনে একটা বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অথচ এর কারণ কেউই জানবে না।

ধুমপান ত্যাগ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। কয়েক দিন আগেই একটা তারিখ ঠিক করে রাখুন। এই ক’দিন সিগারেটের ব্র্যান্ড পাল্টান। নির্দিষ্ট দিনে সিগারেট সাথে যেন না থাকে। প্রথম দিন আপনার তেমন কোন কষ্ট হবে না। প্রথম দুইদিন বার্নিং ডিজায়ার তুঙ্গে থাকায় সমস্যা কাটিয়ে উঠা যায় সহজেই। তৃতীয় দিনে কষ্ট অত্যন্ত বেশি হয়। মনে হয় দিন আর কাটছে না। নিকোটিন গ্রহনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা দেয়। কিন্তু তখন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তার পরের দিন থেকেই কষ্ট কমতে শুরু করবে। কিন্তু সাত দিনের মাথায় এই কষ্টটা বাড়তে পারে।

এবার আসল কথায় আসি। এই বিরতি পর্যায়ে আপনি লক্ষ্য করবেন, নিকোটিন গ্রহনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনেক্ষন থাকে না, কিছুক্ষন গ্যাপ দিয়ে আসছে। এই গ্যাপটা দশ মিনিটি থেকে কয়েক ঘন্টা হতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনি কতদিন ধরে আসক্ত ও কত পরিমাণ নিকোটিন প্রতিদিন নিচ্ছেন তার উপর। একটা সিগারেট থেকে, এক থেকে দুই মিলিগ্রাম নিকোটিন যায় আমাদের শরীরে। নস্যিতে যায় ৩.৬  মিলিগ্রাম আর খৈনী জর্দা এসবের সাথে যায় ৪.৫ মিলিগ্রাম প্রতিবারে। এইযে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ( tobacco craving ) তা কিন্তু মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিট স্থায়ি হয়। এই কয়েক মিনিটের তীব্র আকাঙ্ক্ষা যে আসক্ত ব্যক্তি কন্ট্রোল করতে পারে, সেই জয়ী হয়। অনেক এই তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে, নিকোটিন গ্রহণ করে ফেলে। কারণ তারা বোঝেনা যে, এই তীব্রতা কত ক্ষণস্থায়ী। মাত্র তিন থেকে পাচ মিনিটের এই তীব্রতা জয় করতে পারার মধ্যেই লুকিয়ে আছে, নিকোটিন ত্যাগ করার চাবিকাঠি।

প্রথম দিন থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন , নিকোটিন নেয়া আর না নেয়ার পার্থক্যটা। বুঝতে পারবেন নিকোটিন না নিলে কতটুকু আনন্দ, আর নিলে কুতটুকু আনন্দ। তখনই বুঝবেন না নিলেই ঢের বেশি আনন্দ। তা শুধুমাত্র মানসিকই নয়। শারিরিক এক চরম সুখাবস্থাও বটে। অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে শারিরিক শক্তিও অনেক গুণ বেড়ে যাবে। কাজে কর্মে নূতন মাত্রায় গতি আসবে।

কিন্তু আপনি যদি নিকোটিনের নেশা ত্যাগ করার পর, কখনো একবারও নিকোটিন নেন, তবে আগের আসক্তিতে ফিরে যাবেন কিন্তু। সাধ্যসাধনা করে নিকোটিন ত্যাগ করার সমস্ত পরিশ্রম পণ্ড হয়ে যাবে। এইখানেই সকলে একটা ভুল করে বসে। এখানে খুব শক্তিশালী একটা মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর কাজ করেসবাই ভাবে –“আমি তো নিকোটিন ছাড়তেই পারি, তাই একবার নিলেই বা কি”। এই ভাবেই বেশিরভাগ নিকোটিন সেবী, পুনরায় নেশার জীবনে ফিরে আসার ফাঁদে পা বাড়ায়। এখানেই আছে পুনরায় নেশাসক্ত হবার রহস্য।

এবার ওষুধ প্রয়োগে নিকোটিনের আসক্তি থেকে মুক্তির দিকটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যেতে পারে। এখন বাজারে নিকোটিনের নেশা কাটানোর অনেক ওষুধ বেড়িয়েছে, যদিও ঐসব ওষুধ বিশুদ্ধ নিকোটিন ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন একটা ওষুধের বানিজ্যিক নাম NICOTINELL TTS যা তামাক থেকে পরিশোধিত নিকোটিন দিয়েই তৈরি করা হয়। আর TTS মানে Transdermal Therapeutic System এটি আসলে নিকোটিন মাখানো আঠাযুক্ত ন্যকড়া, যা আয়তন অনুসারে তথা স্কোয়ার সেন্টিমিটার হিসেবে বিক্রি হয়। এটি কান বা অন্য স্থানে চামড়ায় লাগানো হয়। এর থেকে অল্প অল্প নিকোটিন ধীরে ধীরে চামড়া দিয়ে  শোষিত হয়ে রক্তে যায়। আর এতে নাম্বার দেয়া থাকে যাতে ক্রমহ্রাসমান হারে নিকোটিনের যুক্ত করা থাকে। এমন TTS ওষুধের বাজারে এখন অন্য নামেও পাওয়া যায়। ইনহেলার তথা স্প্রে করেও বিশুদ্ধ নিকোটিন নেয়া যায়। এখন চুইংগামের সাথে নিকোটিন মিশিয়ে আখছার বিক্রি হচ্ছে। এসব একটু ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর এসব নিয়ে কেউ নেশা ছেড়েছেন এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় নি। তবে  ধনীরাই এসব নিতে পারে। এসবে সিগারেট খৈনি পানের, নিকোটিন ব্যাতিত অন্য ক্ষতিকর পদার্থ জনিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। ব্যস এইটুকুই।

যারা প্রিয়জনকে নিকোটিনের নেশা থেকে মুক্ত করতে চান, তাদের উদ্দেশে বলব, আপনারা নেশাগ্রস্থকে রোগী হিসেবেই দেখুন। রাগারাগি বা অনুনয় বিনয়, কোনটাই সঠিক পদ্ধতি নয়। খোলাখুলি বিজ্ঞান সম্মত আলোচনার বাতাবরণ তৈরি করুন। তাদের উদ্বুদ্ধ করে বিরতি লক্ষনে সহায়তার হাত প্রশস্ত করুন। ভালবাসা দিয়ে প্রভাব বিস্তার করুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলারের সাহায্য নিন।

2 comments :

  1. নিকোটিনের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে অনেকেই চেষ্টা করেন নেশা থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু এতে কাজ হয় না। যদি কারো নেশা ছাড়ার ইচ্ছে থাকে, তবে সেই ইচ্ছাকে বার্নিং ডিজায়ার তথা সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায় নিয়ে যেতে হবে। যেহেতু বিরতি লক্ষনই আপনার পথের বাধা, তাই আপনার পরিবার পরিজনকে, আপনার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিন। তাদের কাছে কিছু দিনের জন্যে সহায়তা চান। কারণ নিকোটিন বন্ধ করলে, কোন ঘটনায় প্রচন্ড তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা রাগ হলে, আপনি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে ফেলতে পারেন। যা জীবনে একটা বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অথচ এর কারণ কেউই জানবে না।

    ধুমপান ত্যাগ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। কয়েক দিন আগেই একটা তারিখ ঠিক করে রাখুন। এই ক’দিন সিগারেটের ব্র্যান্ড পাল্টান। নির্দিষ্ট দিনে সিগারেট সাথে যেন না থাকে। প্রথম দিন আপনার তেমন কোন কষ্ট হবে না। প্রথম দুইদিন বার্নিং ডিজায়ার তুঙ্গে থাকায় সমস্যা কাটিয়ে উঠা যায় সহজেই। তৃতীয় দিনে কষ্ট অত্যন্ত বেশি হয়। মনে হয় দিন আর কাটছে না। নিকোটিন গ্রহনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা দেয়। কিন্তু তখন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তার পরের দিন থেকেই কষ্ট কমতে শুরু করবে। কিন্তু সাত দিনের মাথায় এই কষ্টটা বাড়তে পারে।

    এবার আসল কথায় আসি। এই বিরতি পর্যায়ে আপনি লক্ষ্য করবেন, নিকোটিন গ্রহনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনেক্ষন থাকে না, কিছুক্ষন গ্যাপ দিয়ে আসছে। এই গ্যাপটা দশ মিনিটি থেকে কয়েক ঘন্টা হতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনি কতদিন ধরে আসক্ত ও কত পরিমাণ নিকোটিন প্রতিদিন নিচ্ছেন তার উপর। একটা সিগারেট থেকে, এক থেকে দুই মিলিগ্রাম নিকোটিন যায় আমাদের শরীরে। নস্যিতে যায় ৩.৬ মিলিগ্রাম আর খৈনী জর্দা এসবের সাথে যায় ৪.৫ মিলিগ্রাম প্রতিবারে। এইযে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ( tobacco craving ) তা কিন্তু মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিট স্থায়ি হয়। ... বাকিটা ব্লগে পড়ুন

    ReplyDelete
  2. যারা নিজে ধূমপান করেন না, তাদের সবারই সেই একই কথা – “ধূমপান মারাত্মক ক্ষতিকর, এটা ছেড়ে দিলেই তো সব সমস্যা মিটে যায়”। কথাটা বলা খুবই সহজ। কিন্তু যারা ধূমপানে আসক্ত, যারা ইচ্ছে থাকলেও তা ছাড়তে পারছেন না, তারাই জানেন এই ছেড়ে দেয়াটা কতটুকু কঠিন। শুধু তাই নয়, তারা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করেন, এই জীবনে তাদের ধূমপান ত্যাগ করা হয়ত সম্ভব নয়। নতুবা এক কথায় সবাই ধূমপান ছেড়ে দিত।


    ধূমপায়ী আর অধূমপায়ীদের এই পরস্পর বিরোধী ধারণা বা দ্বন্দ্বের সমাধান সুত্রের মধ্যেই নিহিত আছে, ধূমপান ত্যাগ করার কৌশল আয়ত্ব করার সমাধান সূত্র। বাইরে থেকে যতই সহজ মনে হোক না কেন, বিষয়টি যথেষ্ঠ মনোযোগের দাবি রাখে, কিন্তু পদ্ধতিগত দিক থেকে তা অতি সরলীকৃত করা যায়।

    ধূমপান ত্যাগ করার বিষয়টি সাইকো-সোসিও-বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্টর দ্বারা পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত ও নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে যিনি নিজে ধূমপান ত্যাগ করতে চান, এবং যিনি অন্যকে ধূমপান থেকে বিরত করতে চান, উভয়েই কিছু কিছু বিষয়ে একমত পোষণ করলেও, কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে, পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে উঠেনা। অমতের বিষয়গুলি নিয়ে, দুতরফই এমন জটিলতা সৃষ্টি করেন যে, এই বিবাদ নিয়েই সময় অতিবাহিত হতে থাকে এবং ধূমপান ত্যাগের প্রসঙ্গটি গৌণ হয়ে যায়। তর্ক থেকে তর্ক বাড়ে, ধূমপানও বেড়েই চলে। কারণ ধূমপানও একটা প্রোগ্রেসিভ রোগ (progressive disease )।

    ReplyDelete