সুদীপ নাথ আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছে

এই ব্লগে আপনাকে স্বাগত ...... আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য এই ব্লগকে আরও সমৃদ্ধ করবে ...... তার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরুধ রইল

Wednesday, 12 January 2022

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও অশিক্ষিত জনগণ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ও অশিক্ষিত জনতা

সুদীপ নাথ


অতি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ভারতের জনগণের শিক্ষা প্রসঙ্গে মন্ত্যব্য করেছেন, “একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি দেশের জন্য বোঝা। কারণ তিনি জানেন না সংবিধান তাকে কী কী অধিকার দিয়েছে। তেমনই তিনি জানেন না দেশের প্রতি তার কী কী দায়িত্ব এবং কী কী কর্তব্য। এই ধরনের ব্যক্তি কীভাবে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হতে পারেন ?” সংসদ টিভির সাক্ষাৎকারে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বলেই বেশিরভাগ পত্রপত্রিকাগুলো লিখেছে। ঐ মিডিয়াগুলো আরো লিখেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশাসক হিসাবে শুরু থেকেই শিক্ষার গুরুত্ব বোঝেন। তাই তাঁর সরকার শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রাথমিক গুরুত্ব দেয়।
  সংবাদ প্রতিদিন মন্তব্য করেছে, অমিত শাহর এই শব্দচয়ন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে পারতেন শাহ। কারণ, কেউ অশিক্ষিত হলেও তিনি দেশের নাগরিক। নাগরিক হিসাবে আর পাঁচজন শিক্ষিতের মতোই সম্মান পাওয়ার অধিকার আছে তাঁর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য সেই নাগরিকদের জন্য অপমানজনক। বস্তুত সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের ৩০ শতাংশেরও বেশি মানুষ নিরক্ষর। এঁদের অনেকেই পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে পড়াশুনো করতে পারেননি। অনেকের এলাকায় আবার শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি।
বঙ্গভুমি লাইভ ডেস্ক লিখেছে, “বেফাঁস মন্তব্য করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দেশের ‘অশিক্ষিত’ মানুষদের ‘বোঝা’ বলে কটাক্ষ করলেন তিনি। এই নিয়ে প্রচুর মানুষ নিন্দার ঝড় তুলেছেন। দেশের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মুখে দেশবাসীর একাংশের জন্যে এই মন্তব্যকে সাধারণভাবে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
এদিকে, সিপিএমএর স্থানীয় মুখপত্র ডেইলি দেশের কথা, সংবাদসংস্থার খবর উদ্ধৃত করে লিখেছে, “ফের দেশের নিরক্ষর নাগরিকদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য, নিরক্ষর সেনা নিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারের দায়িত্ব দেশের নাগরিকদের শিক্ষিত করা। একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি দেশের জন্য বোঝা। কারণ তিনি জানেন না সংবিধান তাকে কী কী অধিকার নিয়েছে। তেমনই তিনি জানেন না দেশের প্রতি তাঁর কী কী দায়িত্ব এবং কী কী কর্তব্য। এই ধরনের ব্যক্তি একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হতে পারেন না।" বস্তুত, নিরক্ষর নাগরিকদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী”।
“সে সময় অমিত শাহ’র এই শব্দচয়ন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। আনেকেই দাবি করেন, শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে পারতেন শাহ। কারণ, কেউ অশিক্ষিত হলেও তিনি দেশের নাগরিক। নাগরিক হিসাবে আর পাঁচজন শিক্ষিতের মতোই সম্মান পাওয়ার অধিকার আছে তাঁর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য সেই নাগরিকদের জন্য অপমানজনক। সেই বিতর্কের রেশ কাটার আগেই নিজের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করলেন শাহ। বলে দিলেন, “ওই মন্তব্যের জন্য আমার সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আমি আবারও বলব, অশিক্ষিত সেনা নিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানুষকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব সরকারের। যে নিজের সাংবিধানিক অধিকার জানে না, সে দেশের প্রতি ততটা অবদান রাখতে পারবে না, যতটা রাখা উচিত। অর্থাৎ, নিজের আগের মত্তাবাই অনড় রইলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী”। এই অংশের মানুষদের চূড়ান্ত অসম্মান করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ”। তবে, দেশের কথা উল্লেখিত সংবাদ সংস্থার নাম প্রকাশ করেনি।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শাসনের ২০ বছর উদযাপনে অমিত শাহ সংসদ টিভিতে সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপরোক্ত কথাগুলো ছাড়াও বলেন, ২০১৩-২০১৪ সালে এডুকেশন ফর অল গ্লোবাল মনিটরিং-এর সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এদেশে ২৯ কোটি মানুষ অশিক্ষিত। প্রায় ৭ বছর পর এই সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিরাট জনসংখ্যাকে দেশের বোঝা হিসেবে মন্তব্য করা শাহের মুখে শোভা পায় কি না তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে।
এদিকে, সংবাদ প্রতিষ্ঠান Scroll জানাচ্ছে, “Shah claimed that Modi addressed the problem of high dropout rate at primary level in schools across the country. Modi ji and everyone from patwaris [village registrars] to ministers went to 25 schools [in Gujarat] in five days, even in the scorching heat, to get children enrolled there,” the Bharatiya Janata Party leader told the TV channel.”
এবার অতীতের দিকে একটু তাকানো যাক। ভারতবর্ষে অতীতে শিক্ষাদান ছিল ব্যক্তি কেন্দ্রিক। তাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটা হচ্ছে, পিতা-মাতা ও বাড়ির বড়দের থেকে যেখানে পরম্পরাগতভাবে চলে আসত জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞানার্জন-এর প্রক্রিয়াটি। আরেকটি হচ্ছে, গুরুগৃহে শিক্ষালাভ করা, যেখানে অধ্যয়ন হত নৈতিকতা, দর্শন, ধর্ম, জীবনচর্চা ইত্যাদি, এমনকি অস্ত্র শিক্ষা নিয়েও। এটাই আমাদের দেশের প্রথম শিক্ষাঙ্গন তথা বিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত। একটি পর্যায়ে এর থেকেই সমাবর্তন প্রথার সৃষ্টি হয়। রাজতন্ত্রের বিকাশ লাভের সঙ্গে সঙ্গে, রাজগৃহে প্রথম প্রাইভেট টিউশনি চালু হয়, রাজকন্যা ও রাজ পরিবারের অন্য মেয়েদের শিক্ষাকে সামনে রেখে। এইগুলোও প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ই বটে। পরবর্তীতে কিছু বিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলেও, সেগুলো ছিল মূল স্রোতের বাইরে, যেমন নালন্দা। তবে তখনকার শিক্ষা সমাজের ব্যপক হারে বৈষয়িক সমৃদ্ধিতে খুব একটা কাজে আসত না। ঐ সময়ে গুরুদক্ষিণা প্রথা চালু ছিল, কিন্তু তখন তা পেশাদারী রূপ ধারণ করেনি। তখন শিক্ষাদান পণ্য হয়ে উঠেনি। তখন যথার্থই তা ছিল জ্ঞানার্জনকে সামনে রেখে। কিন্তু সমাজ বিবর্তনের হাত ধরে, এখন শিক্ষাও একটা পণ্য। শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে এদেশে নিয়ে আসে ব্রিটিশেরা, তাদের সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য সাফল্যের সাথে ধরে রাখতে।
           দেশীয় শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে বিদেশি শাসকগণ ছিলেন সম্পূর্ণ অজ্ঞ ও উদাসীন। এরা দেশীয় শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় ও মূল্যহীন মনে করতেন। তারা চেষ্টা করতেন দেশীয় শিক্ষাকে কিভাবে এদেশের মাটি থেকে উপড়ে ফেলে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষার নামে ইংরেজি শিক্ষাকে এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া যায়। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৮১৩ সালে সনদ আইনের মাধ্যমে ভারতের জনগণের শিক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত এক লাখ টাকা কিভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে, এ সম্পর্কে লর্ড ম্যাকলের প্রদত্ত মতামতই প্রথম পদক্ষেপ। ম্যাকলের মতে, এমন এক শ্রেণীর লোক গড়তে হবে, যারা তাদের দোভাষীর কাজ করবে। তারা হবে এমন এক শ্রেণীর লোক যারা রক্তে-বর্ণে ভারতীয়, কিন্তু রুচি, নীতি ও বুদ্ধিতে ইংরেজ। এতে দেশীয় ভাষা, সাহিত্য, প্রাথমিক শিক্ষা শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্গঠনের পথনির্দেশনামূলক সুপারিশ পেশ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে, অনেক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে।
               ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্গঠনের সর্বপ্রথম উদ্যোগ ছিল ১৮৫৪ সালে। এই শিক্ষা উদ্যোগই বাংলায় আধুনিক গণশিক্ষার আইনি ভিত্তি রচনা করে। ইংরেজি ও মাতৃভাষার মাধ্যমে বাস্তবসম্মত জ্ঞানদানের লক্ষ্যে, একটি সমন্বিত সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল এর মুখ্য ফলশ্রুতি। তা ছিল মেয়েদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রচলনের সুপারিশ সম্বলিত অন্যতম প্রথম দলিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও পরিকল্পনাগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায়, জনমনে অসন্তোষের সৃষ্টি হলে, ১৮৮২ সালে “ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশন” গঠিত হয়। এই কমিশন সরকারি অনুদান ব্যবস্থার মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা বেসরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়া, স্কুলে অভ্যন্তরীণ ও প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু করা এবং মাধ্যমিক স্কুলে ট্রেইনড টিচার নিয়োগের সুপারিশ করে। হান্টার কমিশনই প্রথম প্রাথমিক শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য বলে বর্ণনা করে। পরে ১৯০১ সালে লর্ড কার্জন একটি সরকারি সিদ্ধান্তের আদলে, ১৯০৪ সালে তাঁর শিক্ষানীতি প্রকাশ করেন। এই শিক্ষানীতিতে হাইস্কুল পর্যায়ে, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভের সুযোগ সম্প্রসারিত করা হয়।
               তারপরে, ১৯১৭ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশন ইন্টারমিডিয়েট পাসকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির যোগ্যতা বলে বিবেচিত করে। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পৌরসভা এলাকায় ও গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয় এবং ১৯৩০ সালের বেঙ্গল প্রাইমারী এডুকেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনের পদক্ষেপ গৃহীত হয়।
স্বাধীন ভারতের সংবিধানে ছিল প্রথম দশ বছরের মধ্যেই “সকলের জন্যে শিক্ষা” বাস্তবায়ন।  এর পর তিন তিনটা জাতীয় শিক্ষা কমিশন গড়া হয়েছে, আর ১৯৮৬ সালে ঘোষিত হয় “জাতীয় শিক্ষা নীতি” তথা  National Education Policy 1986 কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে, এসবে কোন কাজ হয়নি। এখন দেখার শিক্ষার অধিকার আইন তথা Right to Education Act 2009 কতটুকু সুফল দেয়। ত্রিপুরায় এই আইন মানা হয়নি বলেই হাজার হাজার শিক্ষকের চাকুরি চলে যায়।
এবার দেখা যাক অশিক্ষা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঠিক কী বলেছে। শুক দাস বনাম অরুণাচল প্রদেশ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, “Now it is common knowledge that about 70% of the people living in rural areas are illiterate and even more than that percentage of the people are not aware of the rights conferred upon them by law. Even literate people do not know what are their rights and entitlements under the law. It is thus absence of legal awareness which is responsible for the deception, exploitation and deprivation of rights and benefits from which the poor suffer in this land. Their legal needs always stand to become crisis oriented because their ignorance prevents them from anticipating legal troubles and approaching a lawyer for consultation and advise in time and their poverty magnifies the impact of the legal troubles and difficulties when they come. Moreover, because of their ignorance and illiteracy, they cannot become self-reliant: they cannot even help themselves. The law ceases to be their protector because they do not know that they are entitled to the protection of the law and they can avail of the legal service programme for putting an end to their exploitation and winning their rights. The result is that poverty becomes with them a condition of total helplessness. This miserable condition in which the poor finds themselves can be alleviating to some extent by creating legal awareness amongst the poor. That is why it has always been recognised as one of the principal items of the programme of the legal aid movement in the country to promote legal literacy. It would in these circumstances make a mockery of legal aid if it were to be left to a poor ignorant and illiterate accused to ask for free legal services. Legal aid would become merely a paper promise and it would fail of its purpose.” [ Re: Suk Das & Anr vs Union Territory Of Arunachal, DATE OF JUDGMENT10 /03 /1986 ].
এদিকে, সাক্ষরতার হার ও সংজ্ঞা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। আন্তর্জাতিক সংজ্ঞানুযায়ী, সাক্ষরতা হচ্ছে পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লেখার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। এটি একটি ধারাবাহিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজস্ব বলয় এবং বৃহত্তর সমাজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য ক্ষমতা ও জ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ সাক্ষরতা বলতে লিখতে, পড়তে, গণনা করতে ও যোগাযোগ স্থাপন করার সক্ষমতাকে বোঝানো হয়। সাক্ষরতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তি পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীর সমমানের হতে হবে বলে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। লেনিন বলেছেন, একজন ব্যক্তি প্রাইমারি এডুকেশন সমাপ্ত করতে পারলেই, দৈনন্দিন জীবনের সার্বিক যেকোনো কাজ করতে পারে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কেউ বলেনা যে, একজন ৩০ শতাংশ কোর্স জেনে, তিরিশ পেয়ে পাশ করলেই দিজ্ঞজ হয়ে উঠবে। মোদ্দা কথা, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যা কিছু সিলেবাসে থাকে, তার সবটুকু আত্বস্থ করা না গেলে, কেউ সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হবে না। এটাই প্রকৃত স্বাক্ষরতা, যা আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান পন্থা হিসেবে বিবেচিত হয়।  নাম সই করতে পারলেই কেউ স্বাক্ষর বা শিক্ষিত হয়ে উঠে না। এমনকি পঞ্চম শ্রেণি অবদি গোঁজামিল দিয়ে সার্টিফিকেট আদায় করলেও কেউ প্রকৃত শিক্ষিত নয়। অথচ একাধিক ভাষা দূরে থাক, মাতৃভাষায় অক্ষর চিহ্নিত করতে পারলেও সে আক্ষরিক অর্থে শিক্ষিত নয়। ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত অঙ্কের সমস্থকিছুই তার আত্বস্থ হতে হবে, যাতে সবচেয়ে দরকারি হচ্ছে, শতকরা হার নির্নয় ও ভগ্নাংশের নিয়ম। অথচ একদা অগনিত শিক্ষিত নাকি স্পেশিয়াল ড্রাইভে তৈরি করা হয়েছে। যার জেরে, ত্রিপুরা নাকি প্রায় একশ শতাংশ শিক্ষিতের রাজ্য। বেশি দূর যাবার দরকার নেই। জেল দপ্তরেই খোঁজ নিয়ে দেখুন, ওখানে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ হাজতি ও কয়েদি অশিক্ষিত যাদের মধ্যে অনেকেই নামও লিখতে পারে না। ত্রিপুরায় একসময় সাইন বোর্ড দেখা যেতো, একশ শতাংশ শিক্ষিত গাঁওসভা। কেরালা ও অন্যান্য রাজ্যের কথা আর বাড়িয়ে লাভ নেই। সুপ্রিম কোর্টের উল্লেখিত মন্তব্যটিই সবকিছু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আর ত্রিপুরার হাটে মাঠে ঘাটে, সত্যিকারের শিক্ষিত সবারই চোখে পড়ে, বলে দিতে হয় না। এমতাবস্থায় অমিত শাহজীর মন্ত্যব্যটি পাশ কাটয়ে যাওয়ার কোনও উপায় আছে কিনা তা পাঠকেরাই বিবেচনা করে দেখতে পারেন। শাহজীর এই উক্তি ভারতীয় ভূখণ্ডের অশিক্ষিত ও গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো সম্পর্কে ধ্যানধারণাহীন বৃহৎ অংশের নাগরিকের বাস্তব চিত্রটি ফোটে উঠে কিনা, তা নিয়েই এই নিবন্ধের অবতারণা।
( লেখক একজন ফ্রি ল্যান্স কলামিষ্ট)